অনলাইন নিউজ ডেক্স
প্রিয় স্বাধীনতার দিন, ২৬ মার্চ। এই স্বাধীনতা আমাদের কাছে এক গোলাপ ফোটানো দিন। এবার আমাদের এই স্বাধীনতার ৫৪ বছর পূর্ণ হয়েছে। আজ ভিন্ন এক আমেজে আমরা স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করব। জুলাই বিপ্লবে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছেন। এর চেয়ে আনন্দ আর কী হতে পারে?
স্বাধীনতা নিয়ে ইসমাইল হোসেন সিরাজীর একটি বিখ্যাত উক্তি আছে। এটি হচ্ছে, ‘আলোক ব্যতীত যেমন পৃথিবী জাগে না, স্রোত ব্যতীত যেমন নদী টেকে না, স্বাধীনতা ব্যতীত তেমনি জাতি কখনো বাঁচিতে পারে না।’ দীর্ঘদিন আমরা পরাধীন ছিলাম। কোনো রকমে বেঁচে ছিলাম। একে বেঁচে থাকা বলা যায় না। সেই আমরাই এক দিন বাঁচার মতো বেঁচে থাকতে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ফেলে স্বাধীন হলাম।
না, আমাদের এই স্বাধীনতা এমনি এমনি আসেনি। আমাদের স্বাধীনতা রক্তে কেনা। এই স্বাধীনতা লক্ষ প্রাণের দান। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এসেছে এই স্বাধীনতা। ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধ করে স্বাধীনতার লাল সূর্য আমরা ছিনিয়ে এনেছি।
একাত্তরের ২৫ মার্চ কালো রাত থেকে বাঙালি জাতির ওপর শুরু হয় মৃত্যু, ধ্বংস, আগুন আর আর্তনাদের নারকীয় বর্বরতা। কিন্তু এই ঘোরতর অমানিশা ভেদ করে মাত্র ৯ মাসের মাথায় ১৬ ডিসেম্বর এ দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চির ভাস্বর সূর্য। পত পত করে উড়তে থাকে স্বাধীনতার পতাকা। এই পতাকা এক নতুন দেশের উদয়ের সূর্য। যে দেশের নাম বাংলাদেশ।
একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের চিঠি নিয়ে একটি গ্রন্থ সম্পাদনা করতে গিয়ে সাহিত্যিক রশীদ হায়দার লিখেছেন, ‘স্বাধীনতার জন্য প্রাণের আবেগ যখন দুর্দমনীয় হয়ে ওঠে, তখন পৃথিবীর যত ভয়ংকর মারণাস্ত্রই ব্যবহার করা হোক না কেন, সেই আবেগের কাছে তা তুচ্ছ হয়ে যায়। তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি আমেরিকা-ভিয়েতনাম যুদ্ধে। বিশ্ববাসী সেই প্রমাণ আবার প্রত্যক্ষ করেছে ১৯৭১ সালে, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে।’
সত্যিই, একাত্তরে স্বাধীনতার জন্য আমাদের প্রাণের আবেগ দুর্দমনীয় হয়ে উঠেছিল। তাই রক্ত ঝরাতে আমরা পিছপা হইনি। আর রক্ত দিয়েই আমরা নাম লিখেছি বাংলাদেশের নাম। তাই বাংলাদেশের মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় একাত্তর, শ্রেষ্ঠ ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ আর শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা।
স্বাধীনতা এত প্রিয় একটি শব্দ যে, এর উচ্চারণে সর্বশরীরে যেন আনন্দের শিহরন বয়ে যায়। এই আনন্দ একেকজনের কাছে একেক রকম। কেউ স্বাধীনতা উপভোগ করে গলা ছেড়ে মুক্তির গান গেয়ে। কেউ ভরদুপুরে শানবাঁধানো ঘাটে পা ভিজিয়ে কবিতা পড়ে। আবার কেউ রাতে এক পশলা বৃষ্টিতে ভিজে গ্রহণ করে স্বাধীনতার স্বাদ। স্বাধীনতা মানে মুক্তি। স্বাধীনতা মানে লাল সবুজের পতাকা হাতে দুরন্ত গতিতে কিশোরের ছুটে চলা। স্বাধীনতা মানে শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতার শব্দের ঘুঙুর।
মুক্তিযুদ্ধ করে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক মুক্তি। কিন্তু সেই লক্ষ্য এখনো আমরা পূরণ করতে পারিনি। গত ১৫ বছর শেখ হাসিনার শাসনামলে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত হয়। নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। আর দেশের অর্থনীতিকে লুণ্ঠন করে বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়। এভাবে অর্থনীতির মেরুদণ্ড যতটুকু ছিল, তাও ভেঙে দেওয়া হয়।
দেশের ছাত্র-জনতাকে অভিনন্দন গত বছরের জুলাইয়ে তারা এমন এক আন্দোলনের সূচনা করে, ৩৬ দিনের সেই আন্দোলনে শেখ হাসিনার ক্ষমতার মসনদ তাসের ঘরের মতো উড়ে যায়। আমরা আবার পাই স্বাধীনতার স্বাদ, একাত্তরে স্বাধীন দেশ পেয়ে যেভাবে আমরা আনন্দিত হয়েছিলাম। এই স্বাধীনতা আমরা আর হারাতে চাই না। এই দেশকে নতুন করে আমরা গড়ে তুলতে চাই। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। অর্থনৈতিক মুক্তি আসুক, দেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটুক বিপ্লবোত্তর স্বাধীনতা দিবসে এই হোক প্রত্যাশা।