ইমাম হাসান জুয়েল , চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৪ উপজেলায় গভীর রাতে এক অদৃশ্য ‘দূষণের খেলা’ চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন রাতে রাজশাহীর নাবা পোল্ট্রি ফার্মের লোকেরা ট্রাকভর্তি মুরগির বিষ্ঠা ও অন্যান্য বর্জ্য ফেলে যাচ্ছেন। ফলে আশপাশের ফসলি জমি ও পরিবেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তীব্র দুর্গন্ধে বসবাস অনুপযোগী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ, আর কৃষকদের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। যতদূর চোখ যায় দেখা যায় ধানের জমি কৃষকেরা তাদের কষ্টের উদযাপিত ধান কাটার কাজে ব্যস্ত। এইরি মধ্যে চলছে পরিবেশ দূষণের খেলা। বিশাল ধানের জমির মধ্যে রাতের অন্ধকারে ফেলে যাওয়া হয়েছে পোল্ট্রির বর্জ্য। তীব্র রোদে আর গরমে এমনিতেই ধান কাটতে হিফচ্ছেন কৃষকরা। তার মধ্যে আবার পোল্টির বর্জ্যের দুর্গন্ধ এবং মাছির কারণে ধান কাটতে অস্বস্তি হচ্ছে কৃষকদের। সেই সাথে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে ও খাবার খেতেও মাছির জালা পোহাচ্ছেন কৃষকরা। জেলার গোমস্তপুর উপজেলার মাজাহাটি, এলাকায়, শিবগঞ্জ উপজেলার দাইপুকুরিয়া ইউনিয়নের বারেক বাজার দানিয়াল গাছি গ্যারোলি বিল, নাচোলের কাতলা কানদোর বিল এবং সদর উপজেলার প্রধান কৃষি অঞ্চল ঝিলিম ও তার আশেপাশের ইউনিয়নে এ অবস্থা। বিলের পাসে বিশাল জায়গায় ফেলা হয়েছে পোল্ট্রির বর্জ্য। ছড়াচ্ছে এলাকায় দূরগন্ধ। সেই সাথে মাছি পোকার জন্ম নিয়েছে। পাশে আমের বাগান থাকায় আমেরও ক্ষতি হচ্ছে। বলছেন স্থানীয় বসিন্দা মোঃ আফসান আলী বলেন পোল্ট্রির বর্জ্য ফেলার কারণে পোকা মাছি বসবাস অনুপোযোগী হয়ে উঠেছে সেই সাথে আমের বাগানে পাসে থাকায় আমও ঝরে পড়ছে। এই সব বর্জ্য শুধু ফেলে গিয়েই শেষ নয় পোল্ট্রির বর্জ্য নিয়ে চলছে আবার ব্যাবসা। স্থানীয় এক প্রভাবশালি বর্জ্য গুলো রোদে শুকিয়ে বস্তায় ভর্তি করে বিক্রি করছে। সরজমিনে গিয়ে মিললো তার প্রমাণও মান্নান নামে এক বিলের মালিক বললেন দীর্ঘদিন থেকে রাজশাহীর নাবা ফার্ম থেকে এসব বর্জ্য নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে গিয়ে রোদে শুকালে সেগুলোকে মাছের পুকুরে এবং বিভিন্ন জমিতে সার হিসাবে বিক্রি করছেন গোমস্তাপুরের নাঈম নামে নাবা পোল্ট্রি ফার্মের এক দালাল। এর সাথে জড়িত আরও বেশ কয়জন আছে বলে ও জানান তিনি। জড়িত নাঈম আলীর সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি স্বীকার করেছেন তার ব্যবসার কথা, তিনি রাজশাহী নাবা ফার্ম থেকে আমি এইসব বর্জ্য নিয়ে এসে রোদ্রে শুকিয়ে, ধানের জমিসহ বিভিন্ন জমিতে সার হিসাবে বিক্রি করি গরীব মানুষ এইসব করেই সংসার চালাই। রাস্তার পাশে মাঠের পর মাঠের ধান উঠে যাবার পর ফাঁকা মাঠে রাতের অন্ধকারে ফেলা হচ্ছে এসব বর্জ্য। রাজশাহীর নাবা ফার্ম লিমিটেড নামে একটি বড় প্রতিষ্ঠান এইসব বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষণ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জে এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে গোমস্তাাপুর উপজেলার হোগলা নয়াদিয়াড়ী একালার নাঈম আলী। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৫৯ অনুসারে, ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব হচ্ছে পরিবেশ রক্ষা করা। অথচ ঝিলিম ইউনিয়ন পরিষদের এ জনপ্রতিনিধি গোলাম লুৎফুল হাসান জানান, তিনি কিছুই জানেন না। ক্যামেরার সামনে কথা বলতেও রয়েছে তার অস্বস্থি। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, এভাবে খোলা জায়গায় শিল্পবর্জ্য ফেলা আইনত দÐনীয় অপরাধ।বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ধারা ৬ অনুযায়ী, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো জায়গায় বর্জ্য ফেলে পরিবেশের ক্ষতি করে, তাহলে তাকে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। ফৌজদারি দÐবিধির ২৬৮ ও ২৭৭ ধারায়, জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পরিবেশ তৈরি করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং দোষীদের জরিমানা বা কারাদÐ হতে পারে। কিন্তু এসব আইনের বাস্তবায়ন চোখে পড়ছে না। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আবু সাঈদ বলেন, শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য যেকোনো জায়গায় ফেলার কোন নিয়ম নেই। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় পোল্টির বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, এসবে কারা জড়িত সরজমিন পরিদর্শন করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। স্থানীয় কৃষি, পানি ও জনস্বাস্থ্য কে ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসন দূষণ বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিক। প্রায় ৬ মাস থেকে অবৈধভাবে বর্জ্য ফেলা বন্ধে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক এমনটায় আশাবাদী স্থানীয় জনগণ।