বুলবুল আহমেদ বুলু, বদলগাছী (নওগাঁ)প্রতিনিধিঃ
কুলফি মালাইয়ের মিষ্টি স্বাদের সুখ্যাতি আর সুনাম রয়েছে আকাশচুম্বি।কুষ্টিয়ার বিখ্যাত সেই কুলফি মালাই এখন বদলগাছীর গ্রামগঞ্জে ফেরি করে বেচেন এক কুলফিওয়ালা। বলছিলাম উপজেলার কোলা ইউনিয়নের কেশাইল গ্রামের বাসিন্দা বাবু মিয়ার কথা। এক সময় সংসারের অভাব-অনটন সামাল দিতে হিমশিম খেতো বাবু। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোন মতে চলতো বাবু সংসার। বছর দুয়েক আগে পেটের দায়ে কুষ্টিয়া কাজ করতে গিয়ে এক কুলফিওয়ালার সাথে তার পরিচয় হয়। এই সুযোগে তার কাছ থেকে শিখে নেন কুলফি মালাই তৈরির কলাকৌশল।পরে ঢাকা থেকে একটি কুলফি তৈরি মিনি মেশিন ২৫হাজার টাকায় কিনে নিয়ে আসেন।
উপজেলার দ্বীপগঞ্জ বাজার এলাকায় গোধূলি’লগ্নে
কুলফি মালাই বিক্রির ফাঁকে এক আলাপচারিতায় বাবু এই প্রতিবেদক কে জানান, কুলফি তৈরির জন্য সকালে গরুর দুধ এলাকা থেকে সংগ্রহে নিয়ে বাড়ি আসেন । দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই দুধ জ্বালাতে থাকেন।গাঢ় হয়ে গেলে সন্ধ্যার পর সেই দুধ কড়াইয়ে করে ঘরের ভেতর রাখেন। সারা রাত ঠান্ডা হলে পরের দিন সকালে তার ভেতর চিনি,বাদাম,কিচমিচ,মসলা মেশানো হয়। প্রতি এক মণ জ্বালানো দুধে দুই কেজি চিনি মেশান। এর পর স্বাদ ঠিক আছে কি না, সেটা দেখে দেন। বাবুর এ কাজে সহযোগিতা করেন সহধর্মীনি খাতুন।
আইসক্রিম প্রেমী স্থানীয় দ্বীপগঞ্জ বাজারের পল্লী চিকিৎসক বদিউজ্জামান, ব্যবসায়ী মিলন, রনি, রাসেল জানান, বাবু ভাইয়ের কুলফি মালাই আইসক্রিমের স্বাদ যেমন অতূলনীয় তেমনি দামে ও খানিকটা সস্তা তাইতো লোভনীয় এই আইসক্রিম ছেলে বুড়ো সহ সব বয়সের লোকজন
খাচ্ছে।
কেশাইল এলাকার স্থানীয় মঞ্জু,শাহীন, নাজমুল সহ আর অনেকে জানান, প্রতিদিন বাবু মিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গ্রাম-গঞ্জে, হাট-বাজারে চার্জার ভ্যান যোগে গিয়ে আইসক্রিম প্রেমীদের সামনে অল্প সময়ের মধ্য কুলফি তৈরি করে তা বিক্রি করেন। বাবুর কুলফি মালাইয়ের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তার অভাব অনটনের সংসারে ফিরেছে এখন স্বচ্ছলতা, তিনি এখন এই সুস্বাদ কুলফি মালাই বিক্রি করেই এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন।
কুলফিওয়ালা বাবু তার কুলফি মালাই তৈরির কলাকৌশল সম্পর্কে বর্ণনা দেন এই প্রতিবেদকের কাছে।
কুলফি তৈরি সময় মেশিনের ভিতর ভাঙা বরফের টুকরো দেওয়া হয়। আর বরফের সাথে মেশানো হয় লবন। এর পর আইসক্রিম তৈরি জন্য টিনের ডাইসের ভিতরে তরল মালাই ঢালার পর তা মেশিনের ফরমার ভিতর ঢুকানো হয়। টিনের ডাইসগুলোর মধ্য বাশের তৈরি কাঠি দেওয়ার পর তা কাপড় দিয়ে কিছু সময় ঢাকিয়ে রাখা হয়। মেশিনের ফর্মাটি কিছুক্ষণ ঝাঁকানো হয়। চার-থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্য জমাট বেধে তৈরি হয় সুস্বাদু কুলফি মালাই।
ফর্মার ভিতর থেকে একে একে কুলফি মালাই বের করে তা আকর্ষনীয় পাকেট ভরানো হয়।
প্রতিপিচ কুলফি মালাই ১০টাকা দরে বিক্রি হয়।
খুচরা বিক্রির পাশাপাশি যে সব দোকানে অডার নেওয়া থাকে সেই দোকানির কাছে কুলফি মালাই পাইকারি ও বিক্রি করেন তিনি।
প্রতিদিন ফেরি করে ৪শ থেকে ৫শ পিচ মালাই কুলফি বিক্রি করেন। এতে দিনে ৪-৫হাজার টাকা বিক্রি হয়। কুলফি বিক্রি করে প্রতিমাসে প্রায় লাখ টাকা আয় করেন কুলফি বাবু। কুলফি বিক্রি কারণে এলাকায় তাকে এখন কুলফি বাবু নামে ডাকে আইসক্রিম প্রেমী মানুষরা।
বাবুর বুকভরা ইচ্ছা একটা আইসক্রিম ফ্যাক্টরি দেওয়ার কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন – সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়তো বাবুর সেই মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন পুরুন হবে এমনটাই জানান স্থানীয়রা।।