মোঃ মাহবুবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
রাজউকের পূর্বাচল উপশহর এখন লাশের ডাম্পিং স্পটে পরিণত হয়েছে। লাশেরডাম্পিং পয়েন্ট, অহরহ হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনার কারণে পূর্বাচল এখন
আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও নিরাপদ স্থান হিসেবে অন্যত্র হত্যা করে পূর্বাচলে লাশ ফেলে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। গত আট বছরে এখান থেকে ২৫ টি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এছাড়া পূর্বাচলে হত্যা, ছিনতাই,ডাকাতি, ধর্ষণ ও মারামারিসহ নানা অপরাধ বেড়েই চলছে। পূর্বাচলের পলখান,গোবিন্দপুর, বাগলা, চাপড়ি, ধামছি, মাঝিপাড়া, রঘুরামপুর, গুতিয়াবো, পশি, হাড়ারবাড়ী, আলমপুরা, খাইলসা, পিংনাল, কালনি, সুলপিনাসহ আশপাশের এলাকারবাসিন্দারা ডাকাত আতঙ্কে থাকেন। চোরের উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় গবাদি পশুরমালিকরা থাকেন আতঙ্কে। পুলিশের নিরব ভুমিকায় আতঙ্কিত পূর্বাচলবাসী ।
জানা গেছে, গত ৬ জানুয়ারি পূর্বাচলের ৫ নং সেক্টরেরগু তিয়াবো এলাকা থেকে রানী বেগম (২৯) নারীকে হত্যার পর গলাকাটা লাশ রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। গত ১৬ ডিসেম্বর পূর্বাচলের ২নং সেক্টরের বৌরারটেক এলাকায় তরুণী সুজানা (১৫) ও শাহিনুর রশিদ কাব্য (১৬) হত্যার পর লেকের পানিতে ফেলে দেয়। ২০২৪ সালের ২৩ নভেম্বর পূর্বাচলের দাউদপুর ইউনিয়নের আগলা এলাকা থেকে গাজীপুরের পূবাইল কাজীপাড়া এলাকার বাবুল হোসেনকে (৩৫)
হত্যার পর লাশ ধানক্ষেতে ফেলে রাখে। ২০২৪ সালের ১৩ নভেম্বর সকালে নারায়ণগঞ্জের শিল্পপতি জসিম উদ্দিনের সাত টুকরো বস্তাবন্ধি লাশ পূর্বাচলের ৫ নম্বর সেক্টরের একটি লেক থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরকীয়ার জেরে তাকে অন্যত্র হত্যা করা হয়। তারপর নিরাপদ স্থান হিসেবে পূর্বাচলে লাশ ফেলে রাখে। একই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর ১০ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর সেতুরনিচ থেকে কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় মানুষের বেশ কিছু কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়।
২০২৩ সালের ৭ জুলাই ১৯ নম্বর সেক্টর থেকে অজ্ঞাতনামা যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। একই বছরের ২৪ আগস্ট ২০ নম্বর সেক্টর এলাকার একটি সবজি-খেত থেকে আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ২০২২ সালের ১৯ মে ২৫ নম্বর সেক্টর এলাকা থেকে মজিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তির লাশ ও একই বছরের ২৭ ডিসেম্বর অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ উদ্ধার
করা হয়।
২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি ১০ নম্বর সেক্টর থেকে মিলন মিয়ার লাশ, একই বছরের ২৩ আগস্ট ৪ নম্বর সেক্টর থেকে সাত মাসের নবজাতকের লাশ, ৮ অক্টোবর ৭ নম্বর সেক্টর থেকে হৃদয় হাসানের লাশ উদ্ধার করা হয়। ২০২১ সালের ১৬ অক্টোবর ২৬ নম্বর সেক্টর থেকে সাইফুল ইসলাম নামে এক ইজিবাইক চালকের লাশ ও অজ্ঞাত
পরিচয় এক যুবকের লাশ ৪ নম্বর সেক্টর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি ৮ নম্বর সেক্টর থেকে মজুর উদ্দিন নামে এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করা হয়।
২০১৯ সালে ভোলানাথপুর এলাকার কাশফুলের ঝোপ থেকে এক ধর্ষিতা তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয়। একই বছরের ১৬ নভেম্বর নিখোঁজের চার দিন পর মাওলা নামে এক অটোচালকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ২০১৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ১১ নম্বর সেতুর নিচ থেকে গুলিবিদ্ধ সোহাগ, শিমুল ও আজাদ নামের তিন যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ৭ নভেম্বর ১০ নম্বর সেক্টর থেকে অজ্ঞাত পরিচয় এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ২০১৭ সালের ২ জুন পূর্বাচলের গুতিয়াবো এলাকা থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল পূর্বাচলের ১৩ নম্বর সেক্টরে ব্রিফকেসের ভেতর থেকে অজ্ঞাত পরিচয় এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ২৪ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সাজ্জাদ হোসেন নামে এক সৌদি প্রবাসীকে গাড়ি করে পূর্বাচলে নিয়ে আসা হয়। পরে তাকে জিম্মি করে তার কাছ থেকে সাত ভরিস্বর্ণালংকার ও নগদ টাকাসহ ১৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটে নেয় দুর্বৃত্তরা।
গত ৭ জানুয়ারী মঙ্গলবার ভোরে পূর্বাচল উপশহরের ৪নং ব্রিজের কাদিরারটেক ও লেংটার মাজার এলাকায় ৩শ’ ফুট সড়কে পুলিশ পরিচয়ে পৃথক ঘটনায় দুটি মাইক্রোবাসের গতিরোধ করে মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে মালেয়েশিয়া প্রবাসী আমজাত হোসেনের কাছ থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ ৮ লাখ টাকারমালামাল লুটে নেয় ও দুবাই প্রবাসী আব্দুল কাদিরের কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল সেট ও স্বর্ণালংকারসহ ৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকার মালামাল লুটে নেয়।
জানা যায়, পূর্বাচলের জমি অধিগ্রহণ করার পর অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে বাড়িঘর নির্মাণ করেন। ফলে ফাঁকা হয়ে পড়ে পূর্বাচল। এছাড়া একেকটি এলাকা যেনো একটি বিচ্ছিন্ন ব-দ্বীপ। কুড়িল-কাঞ্চন ৩০০ ফুট রাস্তা হওয়ার পর থেকে পূর্বাচল হয়ে ওঠে অপরাধীদের অভয়ারণ্য।
পূর্বাচলের প্রত্যেকটি এলাকাই দুর্গম। দুর্গম এলাকা হওয়ার ফলে পূর্বাচলকে অপরাধীরাও বেছে নিয়েছে। ফলে অপরাধীরা অনায়াসে এখানে এসে অপকর্ম করে সটকে পড়ে। পূর্বাচলে বিভিন্ন সময় অপরিচিত লোকজনের আনাগোনাও দেখা যায় বলে জানা গেছে। নীরব এলাকা হওয়াতে মানুষ হত্যার পর সহজেই এখানে লাশ ফেলছে। একসময় পূর্বাচলে ছিলো শুধু সবুজের সমারোহ। ছিলো সবজির ক্ষেত। গোলা ভরা ধান ছিলো। পুকুর ভরা মাছ। এখন শুধু বালু আর বালু। এরপরে শুরু হলো ডাকাতি। এখন পুর্বাচলের বাসিন্দারের ঘুমভাঙ্গে লাশের খবর শুনে। এলাকার বেশ কয়েক জন বাসিন্দা বলেন, পূর্বাচলে পুলিশের নিয়মিত টহল থাকলে অপরাধীরা এতো অপরাধকরার সাহস পেতো না। কালভেদ্রে এখানে পুলিশের দেখা মেলে। পূর্বাচলবাসীরাএ খানে অবিলম্বে পুলিশের টহল বৃদ্ধি করার দাবি জানান।
রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলী বলেন, জনবল সংকট থাকায় তাদের টহলকার্য ক্রমে কিছুটা বিঘ ঘটছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম বলেন, পূর্বাচলের পুলিশ ক্যাম্প পুনরায় চালু করা হবে। শিগগিরই পুলিশের টহলও বাড়ানো হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ গোলাম জাকারিয়া , নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ আব্দুল্লাহ স্থায়ী ঠিকানা : বৈশাখী টাওয়ার, বাড়ি নং-৫৬, রোড নং-১৬ ,সেক্টর-১১, উত্তরা, ঢাকা বাংলাদেশ। লোকাল অফিসঃ বেহুলা, গোবরাতলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
ইমেইল : 𝐝𝐜𝐛𝐭𝐯𝟐𝟒@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦 মোবাইল নম্বর : ০১৩০৩-৪৪৭০৭৭
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত