রিপন আলী চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার এক এএসআইয়ের দায়িত্বহীন ফেসবুক পোস্টের জেরে অপবাদ ও সামাজিক হেনস্তার শিকার হয়েছেন একজন সিএনজি চালক ও এক অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। ঘটনাটি ঘটে ২৩ এপ্রিল রাতে এবং তা নিয়ে চরম আতঙ্ক ও ক্ষোভে রয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, সেদিন রাত ১২টার দিকে গোমস্তাপুর উপজেলার শুক্রবাড়ী এলাকা থেকে হার্টের রোগী নিয়ে সদর আধুনিক হাসপাতালে যান সিএনজি চালক বাবুল হোসেন। তার সাথে ছিলেন রোগীর ছেলে মনিরুল ইসলাম ও তার মামাতো ভাই। রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে বাসায় ফেরার পথে শহরের পারহাউস মোড়ে তাদের থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সদর থানার এএসআই নজরুল ইসলাম।
জিজ্ঞাসাবাদের সময় নিজের মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেন এএসআই নজরুল এবং কিছুক্ষণ পর তাদের ছেড়ে দেন। কিন্তু এরপর ৪ মে ‘MD Nazrul Islam’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে সেই ভিডিও ও ছবি পোস্ট করে দাবি করা হয়, চুরি যাওয়া অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়েছে।
পোস্টে তিনি লিখেন, “চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সুযোগ্য মাননীয় পুলিশ সুপার জনাব মোঃ রেজাউল করিম বিপিএম-সেবা স্যার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবাবগঞ্জ সার্কেল) জনাব মোঃ ইয়াসির আরাফাত স্যারের দিকনির্দেশনা মোতাবেক সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব মতিউর রহমান স্যার চুরি হওয়া অটো – গাড়ি উদ্ধার”
এই পোস্টটি ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় ভুক্তভোগীদের চরম লাঞ্ছনা। সিএনজি চালক বাবুল হোসেন বলেন, “এই ঘটনায় আমি কোথাও ভাড়া নিয়ে গেলেই মানুষ সন্দেহের চোখে তাকায়, টানা-হেঁচড়া করে। আজ সকালেও এক এলাকায় গিয়েছিলাম, সেখানেও গালিগালাজ শুনতে হয়। এখন ঘর থেকে বের হতে ভয় লাগে। আমি এই মিথ্যা অপবাদ থেকে মুক্তি চাই।”
অন্যদিকে, রহনপুর ইউসুফ কলেজের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম বলেন, “আমার বাবার চিকিৎসা করাতে গিয়ে এমন ঘটনার শিকার হবো ভাবিনি। এখন এলাকার লোকজন আমাকে অটোচোর বলে ডাকে। ফোনেও বাজে মন্তব্য শুনতে হচ্ছে। আমি এই ঘটনার তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা দাবি করছি।”
ফেসবুকে পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে এএসআই নজরুল ইসলাম বলেন, “আমি চুরি হওয়া অটোরিকশা উদ্ধারে অভিযানে ছিলাম, তাই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করি।”
তবে তার পোস্টে ব্যবহৃত ছবি ও ভিডিও নিয়ে সামাজিকভাবে ভুক্তভোগীরা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন -এই প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য না করে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
ভুক্তভোগীদের দাবি, এমন দায়িত্বহীন আচরণ পুলিশের মত একটি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে এবং নিরীহ মানুষদের জীবনে চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাঁরা বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।